Navigation Menu

বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৩

গিনেসে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদে প্রোগ্রামার হিসেবে নাম লেখাচ্ছে বাংলাদেশের ‘রূপকথা

সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে এবার বাংলাদেশি এক ক্ষুদে কম্পিউটার জিনিয়াস ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে’ নাম লেখাতে যাচ্ছে। নাম ওয়াশিক ফারহান রূপকথা। মাত্র ৭ বছরের এই বিস্ময় বালক কারো থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা ছাড়াই নিজ উদ্যোগে শিখে ফেলেছেন কম্পিউটারের খুটিনাটি অনেক কিছু। সে প্রোগ্রামিংয়ে সি, সি++, ভিজ্যুয়াল বেসিক, জাভা, পাইথন, উইন্ডোজ এক্সপি, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড (দ্রুত গতিতে কম্পোজ), পাওয়ার পয়েন্ট, এডোবি ফটোশপ, ফ্লাশ প্রভৃতিতে দক্ষতা অর্জন করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে অভিহিত করে রূপকথাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বিবিসি ওয়ার্ল্ড, ক্যালিফোর্নিয়া অবজারভার, নিউইয়র্ক টাইমস, নিউইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন, এস্টেট নিউজ, চিলড্রেন পোস্ট, জি-নিউজ, হিন্দুস্থান টাইমসসহ অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বাংলাদেশে অষ্টম শ্রেণীর ‘ইংলিশ ফর টুডে’ টেক্সট বইয়ে রূপকথাকে মডেল হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
06202013_000019_RUPKOTHA
রিপলি’স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২০১১ সালে রূপকথার অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি মোতাবেক রূপকথার মেধার স্বীকৃতি দেয় রিপলি’স কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ঢাকা গুলশানের মাত্র ৭ বছর বয়সী বাংলাদেশী এই কম্পিউটার জিনিয়াস ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে’ নাম লেখানোর জন্য প্রাথমিক চুক্তি বদ্ধ হয়েছে। ওয়াশিক ফারহান রূপকথার মা সিনথিয়া ফারহিন রিসা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, গিনেস বুকে নাম প্রকাশের নিয়ম অনুযায়ী গত ১৬ মে ধানমন্ডির ক্রিয়েটিভ আইটি লিমিটেডের অফিসে একটি ভিডিও ডকুমেন্টেশন তৈরি করা হয়। এই ভিডিও এবং অন্যান্য ডকুমেন্টস গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, শীঘ্রই রূপকথার নাম ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে’ ঘোষণা দেবে কর্তৃপক্ষ।
বিস্ময়ের জন্ম যেভাবে 
২০০৬ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকার গুলশানে রূপকথার জন্ম। জন্মের পর ওর বয়স যখন মাত্র কয়েক দিন, তখন সে পিসির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। মাত্র ৭ মাস বয়স থেকেই রূপকথা তার বাবার পিসিতে মাউস নিয়ে কম্পিউটার গেমস খেলা শুরু করে। তার বয়স যখন ১ বছর, তখন তাকে কিছু খাওয়াতে চাইলে কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে খাওয়ানো হতো। প্রথমে পিসি অন করতে হতো, এরপর সে তার সামনে বসে খাওয়া শুরু করত। মাত্র দুই বছরের মাথায় সে এমএস ওয়ার্ডে টাইপিং শুরু করে। তাকে খাবার খাওয়ানো হতো পিসির সামনে বসিয়ে বিভিন্ন অ্যানিমেশন ছবি দেখিয়ে। ওইটুকু বয়সী শিশুর এই আবদার মেটাতে তার মা সিনথিয়া ফারহিন রিসাকে সবকিছুই করতে হতো। কিন্তু তিনি ধৈর্য হারা হতেন না। সন্তানের চাওয়াকে সব সময় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতেন।
কম্পিউটার সম্পর্কে রূপকথার যা জানা
৭ বছরের এই বয়সে অধিকাংশ শিশু যখন খেলনা নিয়ে ব্যস্ত তখন রূপকথা তার নিজস্ব কম্পিউটার সিস্টেম (উইন্ডোসসহ) তৈরি করে এবং একজন বিশেষজ্ঞের মতো কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করে। জন্মগতভাবে মেধাবী রূপকথার বাসা রাজধানী ঢাকার গুলশানে। অবিশ্বাস্যভাবে মাত্র সাত মাস বয়স থেকেই সে কম্পিউটার নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে এবং দুই বছর বয়সে কম্পিউটারে লেখালেখি করা শিখে ফেলে। তার গর্বিত মা সিনথিয়া ফারহিন রিসা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই বিস্ময়বালক প্রতিদিন ১২ ঘণ্টারও বেশি কম্পিউটারের পেছনে ব্যয় করে এবং গেমের কারেক্টর কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা জানার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয়, এই বয়সেই সে শিখে ফেলেছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, প্রজেক্ট টুল তৈরি, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের মতো অনেক জটিল কাজ। বর্তমানে দিনের ১২ ঘণ্টাই কাটে তার কম্পিউটারের সঙ্গে। ৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই ‘ওয়ার্ল্ড নিউজ এজেন্সি’ রূপকথাকে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী প্রোগ্রামার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
06202013_000022_RUPKOTHA
রূপকথা তার হাতের ছোট আঙুল দিয়ে না দেখে এত স্পিডে টাইপ করতে পারে যে বিশ্বাস করাই কঠিন। টাইপিং তার কাছে খুব সাধারণ একটি বিষয়। এরই মধ্যে উইন্ডোজ এক্সপি, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট, এডোবি ফটোশপ, ফ্লাশ প্রভৃতিতে বেশ পারদর্শিতা হয়ে গেছে। এমএস ওয়ার্ডের ফাইল তৈরি, টেক্সট ডিজাইন, পিকচার অ্যাড, গ্রাফ ও টেবিল ওয়ার্ক, এক্সেল দিয়ে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ, পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে পিকচার মুভিং অ্যানিমেশন, স্লাইড শো, সাউন্ড ও মিউজিক অ্যাডের কাজ তার কাছে কয়েক মিনিটের ব্যাপার মাত্র। ফটোশপে যে কোনো ছবি এডিট করতে পারে স্বাচ্ছন্দ্যে। তথ্য পরিবর্তন করে একটি গেমসের চরিত্রকে আরেকটি গেমসে ঢুকিয়ে দিতে পারে অবলীলায়। ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন গেমিং সফটওয়্যার সে নিজে ডাউনলোড করে নিজেই ইনস্টল করে। একইভাবে সিডি থেকে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও গেমস সে নিজে নিজেই পিসিতে ইনস্টল করে।
হার্ডওয়্যার বিষয়েও তার ভালো জ্ঞান আছে। প্রিন্স অব পার্সিয়া, টার্মিনেটর থ্রি, এজ অব মিথলজি, এজ অব এম্পায়ারসহ ৭শ’র অধিক জটিল কম্পিউটার গেমস সে এরই মধ্যে খেলেছে। ফেসবুক ও মাইস্পেসসহ ইন্টারনেটের বেশ কয়েকটি সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটেও তার অবাধ বিচরণ। ওয়াসিক ফারহান রূপকথা নামে সার্চ করলেই তাকে পাওয়া যাবে। এর বাইরে প্রায় পাঁচ হাজার নির্ভুল ইংরেজি শব্দ জানা আছে তার। রূপকথার মা সিনথিয়া ফারহিন রিসা জানালেন, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে বসে পড়বে কম্পিউটারে। এখন সে দিনের ১২ ঘণ্টা সময় কাটায় কম্পিউটারের সঙ্গে। তার মা অবাক করে দিয়ে জানালেন, এত কিছুর জন্য তার কোনো স্কুল কিংবা প্রশিক্ষক ছিল না কোনোদিন, এখনও নেই। যা শিখেছে সব রূপকথা নিজে নিজেই শিখেছে।
06202013_000021_RUPKOTHA
কম্পিউটার নিয়ে এখানেই রূপকথার শেষ নয়। ফোল্ডার ম্যানেজমেন্টেও তার রয়েছে অসম্ভব দক্ষতা। পিসির ড্রাইভ নেম ও ডেস্কটপের আইকন পরিবর্তন করে দেবে সেকেন্ডেই। এই বয়সে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে সে যতটুকু পারদর্শিতা অর্জন করেছে, বলা যায় অনেক দক্ষ প্রোগ্রামারও তা পারেনি। প্রোগ্রামিংয়ে সে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছে। সে সি, সি++, ভিজ্যুয়াল বেসিক, জাভা, পাইথন প্রভৃতিতে দক্ষতা অর্জন করার পাশাপাশি আলাদা আলাদা কোড দিয়ে নানা প্রোগ্রাম রান করাতে পারে। এমন অনেক কিছুই সে শিখেছে যা কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রামারও বুঝতে পারছে না যে আসলে রূপকথা পিসিতে বসে কী করে!



খেলনা নিয়ে যখন অন্য শিশুদের সময় কাটছে, রূপকথা তখন বিরামহীনভাবে কম্পিউটারের সঙ্গে কথা বলছে। মাঝে মাঝে তার কম্পিউটারকে রি-ফরমেট করতে হয়। সেটআপ সে নিজেই দেয়। উইন্ডোজ সেটআপ নয়, ভিসতা ও ওরাকল সেটআপও সে করতে পারে। সতর্কতা হিসেবে প্রতিদিন সে ভাইরাস স্ক্যানও করে। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের ডেট এক্সপায়ার করলে নিজেই ইন্টারনেট থেকে আপডেটেড ভার্সনটি ডাউনলোড করে নেয়। পাশাপাশি শিখে ফেলেছে ফটোশপ ও ফ্লাশ ফাইভের নানা ডিজিটাল কারুশিল্প। মোট কথা, কম্পিউটারের এমন কিছু নেই যা তার কাছে অজানা।


বিশ্বের শীর্ষ গণমাধ্যমে রূপকথা

বাংলাদেশের অনেক মিডিয়ায় রূপকথার সচিত্র সংবাদ ছাপালেও রূপকথা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ ভালো করেই জায়গা করে নিয়েছে। এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে অভিহিত করে রূপকথাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বিবিসি, ক্যালিফোর্নিয়া অবজারভার, নিউইয়র্ক টাইমস, নিউইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন, এস্টেট নিউজ, চিলড্রেন পোস্ট, হিন্দুস্থান টাইমসসহ অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও অনলাইন। কোথাও কোথাও তাকে মডেল হিসেবেও তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে অষ্টম শ্রেণীর ‘ইংলিশ ফর টুডে’ টেক্সট বইয়ে রূপকথাকে তুলে ধরা হয়েছে। তার কৃতিত্বের কথা জানতে পেরে রিপলি’স বিলিভ ইট অর নট-এ তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার একটি দারুণ কার্টুনও প্রকাশ করেছে তারা। সর্বশেষ গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তার নাম অন্তর্ভুক্তর প্রক্রিয়া চলছে।


রিপলি’স বিলিভ ইট অর নট-এ স্বীকৃতি
২০১১ সালে রিপলি’স বিলিভ ইট অর নট-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই বিস্ময় বালক। রিপলি’স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২০১১ সালে রূপকথার অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি মোতাবেক রূপকথার মেধার স্বীকৃতি দেয় রিপলি’স কর্তৃপক্ষ। এরপর রূপকথাকে ‘বিস্ময়কর বালক’ স্বীকৃতি দিয়ে একটি বিশেষ ছবি প্রকাশ করেছিল রিপলি’স বিলিভ ইট অর নট। একই সঙ্গে রূপকথাকে একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবেও অভিহিত করেছে তারা। কিন্তু অতটুকু শিশুর পারফরম্যান্স নিয়ে বর্তমানে গিনেস বুকে তার নাম আসা মানে বাংলাদেশীদের জন্য বিরাট গর্বের একটা বিষয়।
06202013_000020_RUPKOTHA


‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন
রূপকথার মা সিনথিয়া ফরহিন রিসা জানিয়েছেন, শীঘ্রই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদে প্রোগামার হিসেবে গিনেস বুকে রূপকথার নাম প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও জানান, গিনেস বুকে নাম প্রকাশের নিয়ম অনুযায়ী গত ১৬ মে ধানমন্ডির ক্রিয়েটিভ আইটি লিমিটেডের অফিসে একটি ভিডিও ডকুমেন্টেশন তৈরি করা হয়। এই ভিডিও এবং অন্যান্য ডকুমেন্টস গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা এই ডকুমেন্টগুলো হাতে পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন।


রূপকথা নিয়ে কয়েকটি ভিডিও
ইউটিউবসহ বিভিন্ন ভিডিও শেয়ারিং রূপকথা নিয়ে রয়েছে অনেক ভিডিও। গুগলে incredible cyber baby roopkotha অথবা amazing cyber baby roopkotha লিখে সার্চ করলেই পাওয়া যাবে তাকে নিয়ে অনেক ভিডিও। রূপকথার কাজ নিয়ে ইউটিউবসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটে রয়েছে বেশকিছু ভিডিও ক্লিপিংসের লিংক। এগুলোর কোনোটিতে দেখা যাচ্ছে সে অনেক দ্রুত টাইপ করছে। আবার কোনোটিতে প্রোগ্রামিং বা গেমস নিয়ে কাজ করছে।

1 টি মন্তব্য: