Navigation Menu

রবিবার, ২ জুন, ২০১৩

বিচিত্র মানুষের নাম আজিম উদ্দিন।


আজিম উদ্দিনের দিয়াশলাই জাদুঘর
সাভার: বৈচিত্রময় পৃথিবীতে যেমন বিচিত্র ধরনের মানুষের বসবাস, তেমনি মানুষের শখ ও সংগ্রহের বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন। এমন একজন সংগ্রাহক ও বিচিত্র মানুষের নাম আজিম উদ্দিন। বর্তমানে তার সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন মডেলের দেশি-বিদেশি প্রায় আড়াই হাজার দিয়াশলাই বাক্স, লাইটার ও জিপ্পু। এই সংগ্রহ দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন এক ব্যতিক্রম সংগ্রহশালা।

আজিম উদ্দিন সাভার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম হাজী মো. ইউসুফ মিয়ার ছেলে। ২০ বছর ধরে তিনি দিয়াশলাই বাক্স ও লাইটার সংগ্রহ করে আসছেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত এবং অপরিচিত লোকজন তাকে দিয়াশলাই বাক্স ও লাইটার উপহার দিয়ে তার সংগ্রহশালা আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। বিভিন্নভাবে সংবাদ পেয়ে অনেকেই তার কাছে দিয়াশলাই বাক্স ও লাইটার পাঠিয়ে থাকেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ইয়েমেন, ওমান, কম্বোডিয়া, চীন, জাপান, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, আলজেরিয়া, কেনিয়া, লাইবেরিয়া, মিসর, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, কানাডা, ইংল্যান্ড, লাতভিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যন্ড, স্পেন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, হংকং, আমেরিকাসহ ৪৫টি দেশের দিয়াশলাই বাক্স ও লাইটার রয়েছে তার সংগ্রহে।

বাংলাদেশের যেসব কোম্পানি ও ছবিযুক্ত দিয়াশলাই বাক্স তার সংগ্রহে আছে তার মধ্যে মোরগ, ক্যামেল, পান্ডা, রূপচাঁদা, মৃগেল, রেডফিস, হাঙর, পেংগুইন, পিকক, কাঠবিড়ালি, খরগোশ, রোবট, রকেট, ফুটবল, সুপার সনিক, সুপার পাওয়ার, সুপার ফায়ার, চিতল, ডলফিন, পাঙাস, ঈগল, ময়না, কবুতর, কিংফিশার, গোল্ডলিফ, উইলসন কোং, মেরিন, রোথম্যান, সানমুন, বনানী গোল্ড, রাজধানী, সুপার স্টার, সুপার গোল্ড, সুপার প্লে, সুপার গেম, সুপার গ্লোব, গোল্ড স্টার, ইউরো ২০০০, ফায়ার বক্স, ভরসা, ভরসা গোল্ড, করিম ভরসা, কেভি গোল্ড, মৌরানী, মৌবন, প্রজাপতি, মার্লবরো, ওমেকা, বেলুন, হিমালয়, বিশ্বাস, ট্যাক্সি, চ্যাম্পিয়ন, ফিলিপস, আলিফ, গ্রামীণ, দেশ, বর্ষা, টু স্টার, টুয়েলব স্টার উল্ল্যেখযোগ্য। এছাড়া ব্যতিক্রমধর্মী কিছু দিয়াশলাই বাক্সও রয়েছে আজিম উদ্দিনের সংগ্রহে।

তার সংগৃহীত দিয়াশলাই বাক্সগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কানাডার টাচ্ কোম্পানির একটি দিয়াশলাই, যার প্রস্থ পৌনে ২ ইঞ্চি ও লম্বায় ১ ফুট। অন্যদিকে সবচেয়ে ছোট আকৃতির ম্যাচটি ভারত থেকে সংগৃহীত। যার প্রস্থ আধা ইঞ্চিরও কম এবং দৈর্ঘ্য ১ ইঞ্চি। তার সংগ্রহশালায় ত্রিভুজ আকৃতির দিয়াশলাই রয়েছে, যা জার্মানির তৈরি।

রয়েছে চীনের তৈরি গ্লোবাল ব্রাইট কোম্পানির ২৫০ কাঠির দিয়াশলাই, ভারতের বাল্ব কোম্পানির ২৪০, ২৫০, ৩০০ কাঠির ও হোম লাইট কোম্পানির তৈরি ২৫০, ৩০০ কাঠির দিয়াশলাই।

এছাড়া জিউস কন্যা ডায়ানার ছবি সংবলিত দিয়াশলাই; বিভিন্ন দেশের অতীত বর্তমান ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাকীর্তিখচিত দিয়াশলাই; ব্রিটিশ আমলের প্রাইভেটকার, রেসিং কার, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, হাতি, ঘোড়া, ঘোড়ার গাড়ি, কুকুর, বাঘ, সিংহ, কলেরগান, ক্যাসেট প্লেয়ার, ক্যাসেট, টেপরেকর্ডার, বিভিন্ন মডেলের গিটার, তবলা, বিভিন্ন মডেলের হুক্কা, সিগারেটের মডেল, স্ট্রে, চাবির রিং, আপেল, বাদাম, চুইংগাম, বিভিন্ন মডেলের টেলিফোন, ট্রেন, রকেট, জিপ্পু, ৩০ ইঞ্চি উ‍ঁচু স্ট্যান্ড ট্রের মধ্যে লাইটার; কুমির, কামান, সাদ্দাম ও তার দুই ছেলে উদে-কুশের ছবি সংবলিত লাইটার; মালয়েশিয়ার প্যাট্রোনাস টুইন টাওয়ারের ছবি সংবলিত লাইটার; লন্ডন ব্রিজের ছবি সংবলিত লাইটার; প্যারিসের বিখ্যাত গেট চ্যাম্পস এলিসির মডেলসহ বিভিন্ন মডেলের শোপিস, মানুষের ম্যুরাল, কঙ্কালের মাথা, চেয়ার, মুখোশ, ডলফিন, টাইটানিক জাহাজ, আলাদিনের চেরাগ, স্টিল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, দূরবীণ, ঈগল, চড়ুই, পাখির খাঁচা, কোকাকোলার বোতল মডেল, হাতুড়ি, স্লাইরেঞ্জ, পাইপ রেঞ্জ, প্লায়ার্স ও টুলস্ সামগ্রী, বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, তালা-চাবির মডেল, হেজাক বাতি, ফ্লাক্সসহ বিভিন্ন রকমের লাইটার তার সংগ্রহে রয়েছে।

শখের সংগ্রাহক আজিম উদ্দিন নিজ বাড়িতে উন্নতমানের টাইলস ফিটিং ও হাই ডেকোরেশনের গ্যালারিতে সাজিয়েছেন তার ‘ম্যাচ ও লাইটার কালেকশন’ নামের মিনি জাদুঘরটি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আজিম উদ্দিনের মিনি জাদুঘরে রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য পরিদর্শন বই।

এছাড়া জাদুঘরটিতে রয়েছে:
একের মধ্যে দুই- তার সংগ্রহে আছে লাইটার সংযুক্ত কলম, হাতঘড়ি, চাবির রিং, ট্রে, ক্যালকুলেটর, লেজার লাইট, মানি চেকার, চাকু, কম্পাস, ছক্কার গুটি, তাস, হেলমেট, সিগারেট কেস ও টর্চ লাইট।

একের মধ্যে তিন- লাইটার-ট্রে-চাবির রিং সেট, লাইটার-কলম-চাবির রিং সেট, লাইটার-কলম-ট্রে সেট।

একের মধ্যে চার- নেইল কাটার-চাবির রিং-কোকের বোতল খোলার চাবি-লাইটার, লাইটার-কলম- ট্রে-চাবির রিং।

ইতিহাস বিষয়ক দিয়াশলাই- চন্দ্র দেবী ডায়না (আর্তেমিস, গ্রিক), নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, তাজমহল, ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের ছবি খচিত কয়েনের ইতিহাস, চীনা পিরামিড, চুলা ঘুড়ি, প্রাচীন মৌড়ি ঘুড়ি, ড্রাগন ঘুড়ি, কোডি ঘুড়ি, সম্রাট আর্থারের তলোয়ার, দ্য এক্সকেলিভার, দ্য কার্টানা, দ্য কারলেস, দ্য রিপিয়ার।

এছাড়া আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিপণন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণভিত্তিক দিয়াশলাই এবং দেশ বিদেশের অত্যাধুনিক হোটেলের বিশেষ দিয়াশলাই।

জাদুঘরটির স্বত্ত্বাধিকারী আজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের গ্রামীণ চিত্র মজদুর নামে একটি ম্যাচ হাতে পাই। এর কিছুদিন পর আমেরিকার তৈরি একটি ওয়েস্টার্ন ছবিযুক্ত ম্যাচ পাই। তারপর থেকেই আমার মনে শখ জাগে ম্যাচগুলো আমি সংগ্রহে রাখবো। সেই থেকেই শুরু হয় আমার এই মিনি জাদুঘরের ভাবনা।

তিনি বাংলানিউজকে আরও জানান, বর্তমানে ৫টি মহাদেশের ম্যাচ রয়েছে তার সংগ্রহে। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ডা. হেলেন ও তার বান্ধবী ডা. জেসি তার ম্যাচ ও লাইটারের মিনি জাদুঘরটি পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয়েছেন। তারা বলেছেন, এটাই তাদের জীবনের প্রথম ম্যাচ ও লাইটারের জাদুঘর পরিদর্শন।

আজিম উদ্দিন জানান, নেদারল্যান্ড রাষ্ট্রদূতের ছেলে জেরন নিজ দেশের কিছু দুর্লভ ম্যাচ এ জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য পাঠিয়েছেন।

স্থানীয়ভাবেও সাভার পৌর সভার মেয়র আলহাজ মো. রেফাত উল্লাহ ও পৌরসভার কাউন্সিলর খন্দকার শাহ্ মইনুল হোসেন বিল্টু ও সাভার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা ম্যাচ ও লাইটারের এ মিনি জাদুঘর পরিদর্শনের পর মুগ্ধ হয়ে তাকে প্রশংসাপত্র দিয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন